বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

শেখ মুজিবর রহমান কতটা দিয়েছিলেন কি পেয়েছিলেন

১৯৭৩ সালে বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক আর্দে মার্লো ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বলেছিলেন, “তাঁকে আর শুধু একজন সাধারণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভাবা যায় না। তাকে দেখা যায় বাংলার প্রকৃতির আকাশ-বাতাস, পাহাড়, পর্বত, বৃক্ষরাজি শস্যক্ষেত্রের মাঝে”।

৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ (অলিখিত এবং স্বল্প সময়ের) বিশ্বের সেরা ভাষণ। এর আগে আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিস বার্গ এড্রেস বিশ্বের সেরা ভাষণ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ সালে দাশপ্রথা নিয়ে গৃহযুদ্ধে শহীদদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ।

ভার্জিনিয়ার গেটিসবার্গে দাসপ্রথার পক্ষে-বিপক্ষে যুদ্ধে প্রচুর সৈন্য মারা যায়, তাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তিন মিনিটের ভাষণ, যেখানে স্বাধীনতা ঘোষণার কথা ছিল না, ছিল গৃহযুদ্ধ এড়ানোর। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘গেটিসবার্গ এড্রেস’ খ্যাত ভাষণটি ছিল লিখিত এবং পরিসর ছিল সীমিত। যার সারমর্ম ছিল জনকল্যাণ করতে পারে জনগণের, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য সরকার ‘যা পৃথিবী থেকে ধ্বংস হবে না।’

অপরদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত (জনসভাস্থলের ওপর বোমারু বিমান) এলাকায় দাঁড়িয়ে, বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ভাষণটির বিষয়বস্তু অনেক বেশি সার্বজনীন। রণকৌশল, স্বাধীনতা আদায় ও রক্ষা এবং জনগণকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তাসহ কুপমন্ডুকতা থেকে মুক্ত করার দিকনির্দেশনা, সুদূরপ্রসারী অঙ্গীকার। কাব্যিক কৌশলে প্রকাশ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা এবং তার অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া......

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বাঙালীরা কোন দিনই স্বাধীন ছিল না। পাল বা সুলতানী আমল এমনকি যাকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বলা হয়, তার আমলেও নয়। আর নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাঙালি ছিলেন না। লর্ড ক্লাইভ বলেছিলেন পলাশী যুদ্ধের আশেপাশে যে সব কৃষক মাঠে চাষ করছিল, তারা যদি নবাবের পক্ষ হয়ে আক্রমণ করত লাঠিসোটা নিয়ে, তাহলেও ইংরেজরা জয়ী হতে পারত না। অর্থাৎ বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ ছিল না, নবাবের প্রতি।

কিন্তু বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেয়ার কৃতিত্ব সাধারণ বাঙালি কৃষকের সন্তান সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের।

তাই প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী সরদার ফজলুল করিম বলেছেন, "শেখ মুজিবকে আমরা ঈর্ষা করেছি আমাদের অতিক্রম করে বড় হওয়াতে। সবদিক থেকে বড়। তেজে, সাহসে, স্নেহে, ভালবাসায় এবং দুর্বলতায়। এবং সেই ঈর্ষা থেকেই আমরা তাঁকে হত্যা করেছি। কেবল এই কথাটি বুঝিনি যে ঈর্ষায় পীড়িত হয়ে ঈশিতের স্থান দখল করা যায় না" ...

ঈর্ষার ব্যাপারটা বঙ্গবন্ধু ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন, তাই তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন -

"পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষাতেই এই কথাটা পাওয়া যাবে না। ‘পরশ্রীকাতরতা’ পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয়, তাকে ‘পরশ্রীকাতর’ বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষাতেই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু  কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। নিজেকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না ততদিন এদের মুক্তি আসবে না’।

তাই তো এতোদিনেও কাঙ্ক্ষিত মুক্তি আসেনি। মুক্তি আসার আগেই পরশ্রীকাতর বাঙালি খুন করেছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে! 

যিশু-গান্ধী-মার্টিন লুথার কিং কে কেন হত্যা করা হলো? ওরা তো রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন না। আর ইসলামের চার খলিফার মধ্যে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছিল কী অপরাধে? মাত্র ৮ বছরের শিশু রাসেলকেও হত্যা করা হয়েছিল কোন অপরাধে?

যিশুখ্রিস্টকে হত্যার পাপের বোঝা ইহুদিরা আজো বয়ে বেড়াচ্ছে। শেখ মুজিব যিশু ছিলেন না, ছিলেন মানুষ। তাঁর পরিবারের শিশুরা, ছেলেরা, মেয়েরা সবাই মানুষ ছিল, ছিল আদম সন্তান। সম্ভবত এটি এ যুগের বৃহত্তম ও নৃশংসতম  হত্যাকাণ্ড। সন্দেহাতীতভাবে এমন হৃদয়হীন নির্মমতার নজির অন্যত্র মিলবে না......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রকৃত ইসলাম ও ধর্মান্ধদের সন্ত্রাসী ইসলামের পার্থক্য

পাশ্চাত্য প্রকৃত ইসলামী জাগরণকে সন্ত্রাসী ইসলামের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চায় যাতে নিরাপদ থাকে বিশ্বব্যাপী তাদের লুণ্ঠন ও দখলদার ইসরাইলের ক...