বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০

প্রকৃত ইসলাম ও ধর্মান্ধদের সন্ত্রাসী ইসলামের পার্থক্য

পাশ্চাত্য প্রকৃত ইসলামী জাগরণকে সন্ত্রাসী ইসলামের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চায় যাতে নিরাপদ থাকে বিশ্বব্যাপী তাদের লুণ্ঠন ও দখলদার ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী তৎতপরতা। আর ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে পারলে পাশ্চাত্যে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের হিড়িকও কমে আসবে বলে ইসলামের শত্রুরা আশা করছে।



তথাকথিত মুসলিম সন্ত্রাস নিয়ে পাশ্চাত্য ও বিশেষ করে হলিউড নানা ছায়াছবিও নির্মাণ করছে। তবে সম্প্রতি পাশ্চাত্যের গোপন ও প্রকাশ্য-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল 'আইএসআইএল' উত্থান কোনো চলচ্চিত্র নয় বরং বাস্তব ঘটনা।

সন্ত্রাসী দল আল-কায়দার নতুন সংস্করণ ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড লিভান্ট বা সংক্ষেপে 'আইএসআইএল' একটি ওয়াহাবি-সালাফি জঙ্গি সংগঠন। গ্রুপটির নাম থেকেই বোঝা যায় উগ্র বা কথিত সালাফি ইসলামের ভিত্তিতে ইরাক ও আশশাম তথা বৃহত্তর বা প্রাচীন সিরিয়ায় (লেবানন ও ফিলিস্তিনসহ) একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা গ্রুপটির উদ্দেশ্য।



অনেকেই মনে করেন আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত দখলদারিত্ব ও প্রভাব মোকাবেলার জন্য আমেরিকাই বিন লাদেনকে দিয়ে গঠন করেছিল আল-কায়দা ও আরো পরে গঠন করে তালিবান।



তালিবান ও আল-কায়দাকে দ্বিমুখী বা ত্রিমুখী কাজে ব্যবহার করেছে সিআইএ। প্রথমতঃ ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণীর যুবককে শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা, দ্বিতীয়তঃ প্রথম এই উদ্দেশ্য হাসিলের পর তথা সরলমনা ধর্মান্ধ যুবকদের ব্যবহার করার পর ইসলামের নামে ধর্মান্ধতার বিস্তার ও জঙ্গিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ও খারাপ ধারণা ছড়িয়ে দেয়া এবং তৃতীয়তঃ এদেরকে সন্ত্রাসী তৎপরতায় ব্যবহার করে সেই একই সন্ত্রাস দমনের নামে দেশে দেশে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম হয় আমেরিকা।

যাই হোক, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার সময় সর্বপ্রথম গঠিত হয়েছিল 'আইএসআইএল' গ্রুপ। তখন গ্রুপটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক।
২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর 'আইএসআই'-এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করা হয় এবং আবু ওমর আল বাগদাদি গ্রুপটির নেতা বলে জানানো হয়।



২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল আবু ওমর নিহত হলে আবুবকর আল বাগদাদি এই জঙ্গি গ্রুপটির নতুন প্রধান হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে গ্রুপটির বিস্তার শুরু হয়।



'নয়া বিন লাদেন' নামে খ্যাত বাগদাদিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য মার্কিন সরকার দশ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। বাগদাদি ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইরাকের উম্মে কাসর শহরে একটি মার্কিন কারাগারে বন্দি ছিল। ২০০৩ সালের আগেও সে আল-কায়দার সদস্য ছিল বলে মনে করা হয়। তাকেসহ হাজার হাজার চরমপন্থি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয় উম্মে কাসর শহরের 'বুকা' কারাগার থেকে। বাগদাদির আসল নাম ছিল আবু দায়া। ২০০৫ সালে তাকে হত্যা ও অপহরণসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইরাকি নাগরিকদের অপহরণের পর আবু দায়া তাদের বিরুদ্ধে এক গাদা অভিযোগের ফিরিস্তি শুনিয়ে তাদেরকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিত।



বাগদাদি ২০১১ সালে বাগদাদের একটি মসজিদ বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও সে ইরাকের সুন্নিদের প্রতিনিধি বা নেতা হিসেবে খ্যাত খালেদ আল ফাহদাওয়িকেও হত্যার জন্য অভিযুক্ত হয়।



ইরাকের কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে দক্ষ বাগদাদি এখন ছায়ামূর্তির মত গোপনে বিচরণ করে এবং তার কর্মী ও ভক্তরাও খুবই কমই তাকে দেখতে পেয়েছে। সে প্রায় সব সময়ই তার মুখ ঢেকে রাখে যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। আল-কায়দার অন্য যে কোনো নেতার চেয়ে আবুবকর বাগদাদি অনেক বেশি উগ্র চিন্তাধারায় বিশ্বাসী বলে জানা গেছে।



সিরিয়ায় কট্টর ইসরাইল-বিরোধী আসাদ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে পাশ্চাত্য, ইসরাইল এবং তাদের আঞ্চলিক সেবাদাস সরকারগুলোর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হলে 'আইএসআই'ও বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগ দিয়ে এ যুদ্ধে অংশ নেয়।



গ্রুপটি পরে তার নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম ধারণ করে।



সিরিয়ায় ২০১১ সালে গঠিত আন নুসরা ফ্রন্টও 'আইএসআইএল'-এর একটি শাখা হিসেবে দেশটির সরকারি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকে।



২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আবু বকর আল বাগদাদি এক অডিও বার্তায় জানিয়ে দেয় যে 'জিবহাতুন নুসরা' বা 'আন নুসরা ফ্রন্ট' 'আইএসআই'-এর অর্থ ও সহায়তা নিয়েই গঠিত হয়েছে এবং এই দুই গ্রুপ একত্রিত হয়ে 'আইএসআইএল' নাম ধারণ করেছে।

কিন্তু এই দুই গ্রুপের মধ্যে শুরু হয় ক্ষমতা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব। দুই গ্রুপের সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলে উভয় গ্রুপের কাছে শ্রদ্ধেয় আল-কায়দার নেতা (আইমান আল জাওয়াহেরি) সিরিয়ার জন্য আন নুসরা ফ্রন্টকেই নিজের প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করে এবং আন নুসরার নেতার আনুগত্য করতে বাগদাদিকে নির্দেশ দেয়।



'আইএসআইএল'-এর যোদ্ধারা গত দশই জুন ইরাকের নেইনাভা প্রদেশের প্রধান শহর মসুলের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়। শহরটি জনসংখ্যার দিক থেকে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এ ছাড়াও তারা দখল করে ফাল্লুজা ও সাদ্দামের জন্মভূমির শহর তিকরিত। তিকরিত সালাহউদ্দিন প্রদেশের প্রধান শহর।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সরকারি ও গণবাহিনীর হামলার মুখে এইসব অঞ্চলের বহু স্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছে 'আইএসআইএল'-এর সেনারা।



ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিসহ অনেক কর্মকর্তা বলেছেন, ইরাকের একদল সেনা কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ায় এক ষড়যন্ত্রমূলক সমঝোতার আওতায় এই প্রদেশের ৫০ হাজারেরও বেশি সরকারি সেনা কোনো ধরনের বাধা না দিয়েই সন্ত্রাসীদের কাছে শহরটির প্রধান সরকারি ভবন, অস্ত্রাগার, ব্যাংক ও কারাগারগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়।

২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে 'আইএসআইএল' সিরিয়ার রাক্কা শহরে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কথিত ফ্রি-সিরিয়ান আর্মির সেনাদের বিতাড়িত করে। সেখানে জঙ্গি এই গ্রুপ একটি স্থায়ী ঘাঁটিও গড়ে তোলে। রাক্কার জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় নানা ধরনের কঠোর ও চরমপন্থার শাসন। ফলে সেখানে প্রায়ই প্রকাশ্যে ঘটেছে হত্যাযজ্ঞ ও নানা ধরনের কঠোর শাস্তি যার শিকার হয়েছে নিরপরাধ বেসামরিক সিরিয় জনগণ।
২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থক 'সিরিয় মানবাধিকার পর্যবেক্ষক' সংস্থা বা এসওএইচআর বলেছে: 'আইএসআইএল' হচ্ছে উত্তর সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রুপ।



'আইএসআইএল'-কে আমেরিকা ও ইসরাইল ছাড়াও অর্থ, অস্ত্র, রসদ ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি সরকার।
মসুলে এই জঙ্গি দলটির অভিযানের পর ইরাকি কর্মকর্তারা সৌদি ও তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থাকে এবং ইরাকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তারিক আল হাশিমিকে এই অভিযানের নেপথ্য পরিচালক বলে অভিযোগ করেছে। হাশিমি 'আইএসআইএল'-এর উত্থানকে ইরাকি জনগণের স্বপ্নের বিপ্লব বলে দাবি করেছেন।



ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে এক মহাষড়যন্ত্রের আওতায় অস্থিতিশীল করার জন্যই সন্ত্রাসীরা ইরাকে প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু করেছে।



একদল বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ইরাকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ও সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে পুনরায় জয়ী হওয়া নুরি আল মালিকির রাজনৈতিক জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক মহাষড়যন্ত্র করছে দেশী-বিদেশী কয়েকটি চক্র। আর এইসব চক্রের মদদদাতারা হল ইসরাইলি, মার্কিন, তুর্কি, কাতারি ও সৌদি সরকার। তারা ইরাকে সিসির মত কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে চান। এই সরকারগুলো ইরাকের আগে সিরিয়ায়ও বিনা অপরাধে বেসামরিক সাধারণ মুসলমানদেরকে কাফির বলে হত্যা করতে অভ্যস্ত ওয়াহাবি-সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী আইএসআইএল ও আলকায়দাসহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী দলকে অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহায়তা দিয়ে এসেছে।



'আইএসআইএল'-এর কিছু বৈশিষ্ট্য:

১.তাদের বেশিরভাগই হচ্ছে বহিরাগত অর্থাৎ বিদেশী এবং তাদের খুব কম সংখ্যকই ইরাকের অধিবাসী। আর এদের প্রতি রয়েছে সৌদি দরবারি ওয়াহাবি মুফতিদের সমর্থন। ওয়াহাবিদের মতে তারা নিজেরা ও হাম্বলী মাজহাবের অনুসারী ছাড়া হানাফি ও অন্য মাজহাবগুলোর সব ইমাম ও তাদের অনুসারীরা সবাই কাফির এবং এদের হত্যা করা বৈধ। অর্থাৎ সুন্নিদের তিন মাজহাব ও শিয়া মাজহাবের অনুসারীরা সবাই কাফির এবং এদের হত্যা করা বৈধ। 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীদের প্রত্যেককেই প্রতি মাসে ১০০০-১৫০০ ডলার বেতন দেয়া হয়। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও আরব আমিরাত যোগান দিয়ে যাচ্ছে।

২. এইসব সন্ত্রাসীরা যে সব অঞ্চল দখল করেছে সেখানেই নৃশংস ও জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কাউকে এরা রেহাই দেয়নি। শুধু তাই নয় এর আগে সিরিয়ায় দেখা গেছে, এইসব সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে নিহতদের বুক ও পেট চিড়ে হৃদপিণ্ড, কলিজা ইত্যাদি বের করে এনে চিবিয়ে খেয়েছে এবং এ সব দৃশ্যের সচিত্র ভিডিও ফুটেজও এরা প্রকাশ করেছে ইন্টারনেটে।



'আইএসআইএল'-এর সেনারা এরিমধ্যে তাদের দখলকৃত অঞ্চলে হাজার হাজার বন্দী সেনাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেসবের ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করেছে। তাদের সেনারা নানা অঞ্চলে ইরাকি নারীদের ধর্ষণ করেছে বলেও খবর এসেছে। 'আইএসআইএল'-এর আধ্যাত্মিক উৎসাহদাতা ওয়াহাবি মুফতিদের ফতোয়া অনুযায়ী বিজিত অঞ্চলের নারীদের স্ত্রীর মত ব্যবহার করা হালাল বা বৈধ।



এরিমধ্যে মসুলে জোর করে নারীদের বিয়ের অথবা ধর্ষণের ঘটনার পর চার জন নারী আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দিয়েছে জাতিসংঘ।

ইরাকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল আইএসআইএল মসুলে ১২ জন সুন্নি আলেমকে হত্যা করেছে।

দলটির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় এই ১২ জন সুন্নি আলেমকে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বলে গত শনিবার আল ইরাকিয়া টিভি খবর দিয়েছে।

অন্য এক ঘটনায় আইএসআইএল-এর সন্ত্রাসীরা মসুলের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমামকে হত্যার পর তার লাশকে টুকরো টুকরো করে। তাদের দৃষ্টিতে ওই ইমামের অপরাধ ছিল এটা যে তিনি তাদের দলে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। স্থানীয় আলেমরা এই নৃশংস ঘটনা ঘটার কথা জানিয়েছেন।

৩. 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীরা ইসলামসহ নানা ধর্মের অনুসারীদের পবিত্র স্থানগুলোকে ধ্বংস করছে এবং লুটপাট ও নির্বিচার গণহত্যায় লিপ্ত হচ্ছে। অথচ পবিত্র ধর্ম ইসলাম যুদ্ধ-কবলিত অঞ্চলে বেসামরিক পুরুষ, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা তো দূরের কথা সেখানকার গাছপালা, ফসল, ক্ষেত-খামার, পশু, পানি ও পরিবেশের ক্ষতি করাকেও নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি ইসলামী নীতি অনুযায়ী যুদ্ধ-বন্দী বা আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিকেও হত্যা করা নিষিদ্ধ। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি ছাড়াও জাহেলি যুগেও আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিকে হত্যা করা কাপুরোষোচিত কাজ বলে বিবেচিত হত।



ইসলাম যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত কাফির বা অবিশ্বাসী ব্যক্তির লাশকে বিকৃত করাও নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীরা যুদ্ধে নিহত সেনাদের লাশ বিকৃত করা, গাড়ী-চাপা দেয়া ও পদদলিত করা ছাড়াও নিহতদের মাথাকে ফুটবল বানিয়ে ক্রীড়া-কৌতুক করার মত পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, কেউ যদি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে তাহলে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো।



৪. 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীদের অনেকেই আরব দেশগুলোতে হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির মত সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মত কঠোর শাস্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদেশে গিয়ে কথিত জিহাদের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর শর্তে এদের মুক্তি দেয়া হয়েছে।

৫. এই সব তাকফিরি সন্ত্রাসী যারা নিজেদেরকে জিহাদি বা মুজাহিদ বলে দাবী করে তারা ফিলিস্তিন দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের দিকে ভুলেও একটি গুলিও ছুঁড়েনি। একজন ইসরাইলি সেনাকেও হত্যা করে নি। অথচ এ সব সৌদি-কাতারি-তুর্কি-মার্কিন-ইঙ্গ-ফরাসি-জার্মান সমর্থনপুষ্ট তাকফিরি ( সালাফী ) ওয়াহাবি সন্ত্রাসীরা যেমনিভাবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাকে (ওয়াহাবি নয় এমন) লক্ষ লক্ষ নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করছে ঠিক সেভাবে তারা সিরিয়ায়ও যারা ওয়াহাবি মতাবলম্বী নয় তাদের মধ্য থেকে গত তিন বছরে হাজার হাজার মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে!

৬.এইসব বিদ্রোহী ও তাকফিরি ওয়াহাবি (সালাফি) সন্ত্রাসী গ্রুপ ও সংগঠন যেমন সৌদি-কাতারি-তুর্কি- শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সমর্থিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত ঠিক তেমনি তারা সাম্রাজ্যবাদী বিধর্মী পাশ্চাত্য কর্তৃকও সমর্থিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত!



৭.এরা সবাই অত্যন্ত নিষ্ঠুর, হিংস্র ও পাশবিক চরিত্রের বরং পশুর চেয়েও অধম। কারণ, এদের অনেকেই বন্দীদের হত্যা করে তাদের দেহ চিড়ে ফেঁড়ে হৃদপিণ্ড কলিজা ইত্যাদি চিবিয়ে খেয়েছে যা আমরা আগেও উল্লেখ করেছি।

৮.এদের প্রতি আপামর ইরাকি ও সিরিয় জনগণের কোনো সমর্থন নেই।



৯.এদের নিজেদের মধ্যেও কোন ঐক্য নেই ,আর এ কারণে এরা প্রায়ই পরস্পর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আর খোদা না করুক এরা কোথাও ক্ষমতাসীন হলে এই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে আরও সর্বাত্মক,ব্যাপক ও মারাত্মক স্থায়ী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকবে। এরা সিরিয়ায় সাহাবিদের মাজার ধ্বংস করেছে। ইরাকেও নবী বংশের দুই ইমাম তথা বিশ্বনবী (সা.) আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ও ইমাম আলী নাকী (আ.)'র মাজারের গম্বুজ ধ্বংস করেছিল। এরা বিশ্বনবীর নাতি ও কারবালা বিপ্লবের মহানায়ক হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)'র মাজার ধ্বংসের প্রতিজ্ঞা করেছে। এরাই সিরিয়ায় হযরত ইমাম হুসাইন-আ.'র বোনের মাজারে হামলা করেছে, তিন-চার বছরের শিয়া মুসলিম শিশুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে, দুই কুর্দির গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগে-থেকে জ্বালানো আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে ও তার ভিডিও প্রচার করেছে, গর্ভবতী শিয়া মুসলিম নারীর পেট চিরে শিশু বের করে উভয়কে হত্যা করেছে, বন্দী শিশুকে দিয়ে যুবক বন্দীকে হত্যা করে তার ভিডিও প্রচার করেছে, কিশোরদের ধরে এনে হত্যা করেছে এবং বহু বেসামরিক লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকফিরি-ওয়াহাবি ইসলামের কথিত বীরত্বের ভিডিও প্রচার করেছে। এইসবই ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধরত সন্ত্রাসীদের পাশবিকতার আরো কিছু প্রমাণ।
অমিত রসুল অপি
আইন অনুষদ
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি   

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০

সিরিয়া সংকট ও কয়েকটি কথা



বিশ্বে এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট ও মানবিক বিপর্যয় বিরাজ করছে সিরিয়ায়। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায়, টিভির পর্দায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখে পড়ে নারী, শিশুসহ অসংখ্য বেসামরিক নাগরিকের নিহত, আহত হওয়ার খবর। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিপক্ষে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকে পরে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ এখন নানা পক্ষের জড়িত হওয়ায় জটিল এক সমীকরনে দাঁড়িয়েছে। ৬ বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে ৬ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। নিহতের এক তৃতীয়াংশই বেসমারিক নাগরিক। শরনার্থী বা ‘রিফিউজি’ এর সংখ্যা ৬০ লাখেরও বেশি।
সিরিয়া যুদ্ধ
প্রতিদিনই দেখতে হচ্ছে মানুষের অসহায়ত্বের দৃশ্য
এ সংকটের সমাধান কবে হবে সেটা জানা নেই কারো। কিভাবে সিরিয়া যুদ্ধের শুরু হল, এ যুদ্ধে কারা জড়িত, কোন দেশ কাদের পক্ষে, কি তাদের স্বার্থ? কি হতে পারে পরিণতি?
সংকটের সুচনাঃ
২০১১ সাল। গণতন্ত্রের দাবীতে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বিক্ষোভে উত্তাল যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত। এরই সুত্র ধরে ২০১১ এর মার্চে সিরিয়ার একনায়ক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগ ও দেশে একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবীতে সিরিয়ার বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে। রাজধানী দামেস্ক সহ বড় শহরগুলোয় বিরোধী দল ও সাধারণ জনতার বড় অংশ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে প্রেসিডেন্ট আসাদ সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত হতে থাকে বিক্ষোভকারীদের অনেকে। দিনে দিনে নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। হত্যা, নির্যাতনের অভিযোগে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সিরিয়ার উপরে।
৩ মাসে হাজার ছাড়িয়ে গেল নিহতের সংখ্যা। তবুও রাস্তা ছাড়লো না বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনীর অনেকে বাহিনী ছেড়ে চলে আসে। আসাদ বিরোধী বিরোধীদল ও সুন্নি সমর্থকদের সাথে এক হয়ে তারা ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ নামে নতুন সামরিক বাহিনী। আল নুসরা , আল কায়েদার মত জঙ্গী গোষ্ঠীও যোগ দেয় এই বিরোধী বাহিনীতে। বাড়তে থাকে যুদ্ধের ব্যাপ্তি। আসাদের বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মাঝে চলতে থাকে তুমুল লড়াই।
আসাদকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে রাশিয়া ও ইরান। লেবাননের গেরিলা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও আসাদের পক্ষে লড়তে এগিয়ে আসে।
আর বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা দিতে থাকে আমেরিকা, ইসরাইল,  ইংল্যান্ড, ফ্রান্স , সৌদি আরব।
এদিকে যুদ্ধে ৩য় পক্ষ হিসেবে যোগ দেয় আইএস। ইরাকের বিশাল এলাকা দখল করার পর আইএস সিরিয়া দখল করতে অগ্রসর হয়। আইএস এর প্রবেশ পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। আইএস চায় আসাদকে সরাতে, এদিকে আমেরিকাও চায় আসাদকে সরাতে কিন্তু আবার চায় আইএসকে নির্মূল করতে। যুদ্ধে আইএস এর জড়িত হওয়ার ফলেই আমেরিকা আইএস দমনের কথা বলে যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে।
সিরিয়া যুদ্ধ
সিরিয়া যেন এখন এক ধ্বংসস্তুপ
২০১২ এর নভেম্বরে আমেরিকা, ইসরাইল, সৌদি আরব ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ  বিদ্রোহী নেতাদের নিয়ে ‘জাতীয় পরিষদ’ নামে কাউন্সিল গঠন করে এবং সিরিয়ার প্রশাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু আল কায়েদা ও আল নুসরা জঙ্গি গোষ্ঠির নেতাদের পরিষদে রাখা হয় না।
রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগ এনে ও আইএস দমনের কথা বলে কয়েকটি বিমান হামলা করে যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে আমেরিকা।
এদিকে আরেকটি পক্ষ হিসেবে ময়দানে নামে কুর্দিরা। এই যুদ্ধের ডামাডোলে কুর্দিরাও তৎপর হয়েছে তাদের জন্য স্বাধীন আবাসভূমির স্বপ্নে। আমেরিকা এগিয়ে এসেছে কুর্দিদের সহায়তায়। ফলে ন্যাটাভুক্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও কুর্দিদের বিপক্ষে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে তুরস্ক। কারন কুর্দিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র হতে দিতে রাজি নয় তুরস্ক।
বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহনে সিরিয়া পরিস্থিতি এখন জটিল আকার ধারন করেছে।
এবার দেখা যাক কোন দেশের কি স্বার্থ, কেনই বা তারা বিভিন্ন পক্ষকে সহায়তা দিচ্ছে?
সিরিয়া যুদ্ধে পক্ষ বিপক্ষ নির্ধারনে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও প্রকৃতিক সম্পদ সবকিছুই ভূমিকা রেখেছে।
বিভিন্ন পক্ষের বিভিন্ন স্বার্থ সিরিয়া সংকটকে করে তুলেছে জটিল
আমেরিকা, ইসরাইল, ইংল্যান্ডঃ
ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাবে বাশার আল আসাদের পিতা তৎকালীন সিরিয় প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদ ৩০ হাজার সিরিয় সৈন্যকে বেকা উপতাকায় মোতায়েন করেন। এসময় ইসরাইলের সাথে কয়েকবার সংঘর্ষও বাঁধে সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ বাঁধে।তাই ঐতিহাসিকভাবেই সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে শত্রুতা রয়েছে। হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসে বাশার আল আসাদ। পিতার মত সেও ইসরাইল বিরোধী নীতিতে অটল থাকেন। হিজবুল্লাহ ও হামাসকে সহায়তা করে আসাদ সরকার। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আমেরিকা ও ইসরাইল অন্তত ৩ বার সেনাবাহিনীতে ক্যু করার চেষ্টা করেছে। তবে কোনবারই চুড়ান্ত সফলতা পায়নি।  ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল এর জন্য মাত্র দুইটি দেশ হুমকি হয়ে আছে। ইরান ও সিরিয়া। ইরানকে নানা অবরোধ দিয়ে দাবিয়ে রাখায় চেষ্টা অব্যহত আছে। সিরিয়ায় আসাদ কে সরিয়ে নিজেদের পছন্দমত কাউকে বসাতে পারলে সিরিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মূলত এ কারনেই স্বাভাবিকভাবেই ইসরাইল, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো আসাদ বিরোধী বিদ্রোহী বাহিনীকে সহায়তা করছে।
সৌদি আরবঃ
আমেরিকা ও ইসরাইলের মিত্র বলে পরিচিত সৌদি সরকার শিয়াপন্থী আসাদ সরকারকে সরাতে চায় ধর্মীয় মত বিরোধের কারনে ও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধিতার কারনে। আবার ইরানের সাথে আসাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারনে স্বাভাবিক ভাবেই আসাদকে সরাতে চায় ইরানের শত্রু ও ওয়াহাবী পন্থী সৌদি আরব। তাই সৌদি আরব চায় আসাদ কে সরিয়ে তাদের মতাদর্শের ও অনুগত কাউকে ক্ষমতায় বসাতে। এ লক্ষ্যে সৌদি আরব বিলয়ন ডলার খরচ করছে বিদ্রোহীদের পক্ষে।
কাতারঃ
কাতার পারস্য উপসাগর থেকে সিরিয়ার মধ্য দিয়ে তুরস্ক ও ইউরোপে গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে যেতে চায় । কিন্তু রাশিয়ার স্বার্থ চিন্তা করে আসাদ সিরিয়ার মধ্যে দিয়ে এই পাইপ লাইন নিয়ে যেতে অনুমতি দেয় নি। কারন এতে রাশিয়ার ওপর থেকে ইউরোপের প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভরতা কমে যাবে। ফলে কাতারও চায় আসাদের পতন। তাই কাতার আসাদের বিপক্ষে খরচ করেছে বিপুল অর্থ।
রাশিয়াঃ
মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার দুই বিশ্বস্ত বন্ধু হচ্ছে ইরান ও সিরিয়া। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারনে পুতিন ও আসাদের সম্পর্কও এখন বেশ ঘনিষ্ঠ। আসাদের পতন হলে সিরিয়া চলে যাবে আমেরিকা , ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে। তাই রাশিয়া সক্রিয়ভাবেই যুদ্ধের ময়দানে ও জাতিসংঘে আসাদের পক্ষে আছে। ২০১২ সালে যুদ্ধের এক পর্যায়ে যখন কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিল আসাদ বাহিনী তখন রাশিয়া এগিয়ে না আসলে হয়ত আসাদের চরম সংকটেই পড়তে হতো। মূলত রাশিয়ার সহায়তার কারনেই আসাদের বাহিনী এখন তুলনামুলক ভালো অবস্থানে আছে।
ইরানঃ
ইসরাইলের সবচেয়ে বড় শত্রু ইরান। আবার সৌদি আরবের সাথেও ইরানের ঐতিহাসিক শত্রুতা। আর আসাদ সরকার ইসরাইল ও সৌদি বিরোধী। এদিকে ইসরাইলকে চাপে রাখতে লেবাননের হিজবুল্লাহ গেরিলাকে দরকার ইরানের। আর সিরিয়া দিয়েই হিজবুল্লাহকে সহায়তা পাঠাতে হয় ইরানকে।  ফলে রাশিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বি ইরানও সমর্থন করে আসাদকে। ইরান আসাদের বাহিনীকে সামরিক সাহায্য ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করে আসছে। সাহায্য করছে হিজবুল্লাহও
তুরস্কঃ
সিরিয়া যুদ্ধের শুরু থেকেই তুরস্ক আসাদবিরোধীদের সমর্থন করছে। এর একটি কারন হতে পারে সুন্নি ও শিয়া মতভেদ। আরেকটি কারন কাতার পারস্য উপসাগর থেকে সিরিয়া দিয়ে তুরস্কে প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে যেতে চায়, যা আসাদ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আবার তুরস্ক আমেরিকা, ইংল্যান্ডের সাথে ন্যাটো জোটভুক্ত। ফলে শুরুর দিকে ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মির’ সঙ্গে তারা আসাদবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
তবে রাশিয়ার প্রভাবে ও এরদোগানের প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর আসাদ বিরোধী মনোভাব থেকে সরে এসেছে তুরস্ক। বর্তমানে সিরিয়া যুদ্ধে তুরস্কের মূল লক্ষ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকামী কুর্দিদের দমন করা। তুরস্ক চায় না কুর্দিরা নতুন এলাকার নিয়ন্ত্রণ পাক। কারন তুরস্কে কুর্দিরা দীর্ঘদিন ধরে তুরস্ক সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। সিরিয়ার যদি কুর্দিরা কোন স্বাধীন এলাকা পেয়ে যায় তাহলে সেটা তুরস্কের কুর্দিদের জন্য নিরাপদ স্থান হবে ও তুরস্কের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে সুবিধা হবে।
কি হবে পরিণতি? কে হবে জয়ী?
উপরে বিভিন্ন পক্ষ তাদের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ থেকে এটা সহজের বুঝা যাচ্ছে সিরিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করেছে। এখানে নিরুঙ্কুশ ভাবে বিজয়ী পাওয়া মনে হয় সম্ভব নয়। আমরা সকলেই চাই এই ধ্বংসাত্নক যুদ্ধ বন্ধ হোক। অসহায় নারী, শিশুদের করুন মৃত্যু যেন আর না হয়। কিন্তু শান্তিপুর্ন সমাধানে আসা সহজ হবে না। আসাদ বাহিনী ও বিদ্রোহী পক্ষ দুই পক্ষেরই প্রায় দুই লক্ষ করে সদস্য নিহত হয়েছে। ফলে কোনপক্ষই আরেকপক্ষকে ছাড় দেয়ার মানসিকতায় নেই। আত্নসমর্পন করলেও পরাজিত পক্ষকে মেনে নিতে হবে দীর্ঘ কারাবাস ও নির্যাতন। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে নানা দেশের নানা স্বার্থ। এদিকে ১৮ মার্চ রাশিয়ার নির্বাচন। পুতিন চাইবে নির্বাচনের আগে সিরিয়ার নিজেদের ভাল অবস্থান নিশ্চিত করে জনগনকে আশ্বস্ত করতে।
বর্তমানে বিদ্রোহী বাহিনীর চেয়ে আসাদ বাহিনী যুদ্ধে তুলনামূলক ভাল অবস্থায় আছে। তারপরও আসাদ বাহিনীর বড় সমস্যা লোকবল। পুরো সিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করার মত লোকবল আসাদ বাহিনীর এখন নেই। ফলে এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাশিয়া ও ইরানের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হতে পারে আসাদকে। বিদ্রোহী গ্রুপে নানা উপদল থাকায় তাদের মাঝে ঐক্যের অভাব আছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের কোন একক নেতাও নেই। আবার আমেরিকাও বিদ্রোহীদের আগের মত প্রত্যক্ষ সহায়তা করছে না। ফলে কিছুটা কোনঠাসা অবস্থায় আছে।
অমিত রসুল অপি  
আইন অনুষদ, ইস্টার্নইউনিভার্সিটি  

সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

জি ডি কি জেনে নিন এক ঝলকে

জেনে নিন জিডি কি এবং তা কেন ,কখন সহজ উপায়ে করবেন ?

১। ইংরেজি ‘জেনারেল ডায়েরি (General Diary)’ শব্দ দু’টির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো জিডি (GD)। এটি আসলে থানায় রক্ষিত অপরাধ ও অন্যান্য সংবাদ বিষয়ক একটি রে
জিস্টার। সহজ সরল ভাষায় বলতে গেলে অপরাধ ও অন্যান্য সংবাদ বিষয়ক থানায় রক্ষিত ডায়েরিকে জিডি বলে। ২০০ পৃষ্ঠার একটি খাতা বা বইয়ে একটি থানার ২৪ ঘণ্টার যাবতীয় সবকিছু অন্তর্ভূক্ত থাকে। প্রতিদিন সকাল ৮টায় শুরু হয়ে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার সংবাদ রেকর্ড করে পরের দিন সকাল ৮টায় তা বন্ধ করা হয়।
২। জিডির গুরুত্ব:
জিডির আইনগত মূল্য অনেক। কেবলমাত্র একটি জিডির ভিত্তিতেই একটি মামলা শুরু হতে পারে। কোনো অপরাধের আশঙ্কা থেকে একটি জিডি করার পর ওই অপরাধটি সংঘটিত হলে আদালতে ওই জিডি সাক্ষ্য হিসেবেও গৃহীত হয়ে থাকে।
৩। জিডি সাধারণত তিন শ্রেণীর হয়ে থাকে। যেমন-
(১) ধর্তব্য অপরাধের (আমলযোগ্য) জিডি, যা থানায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সাথে সাথেই তদন্ত করতে হবে।
(২) অধর্তব্য অপরাধর (অআমলযোগ্য) জিডি, যা তদন্ত করার জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৫(২) ধারার বিধান মোতাবেক আদালতের অনুমতি নিতে হয়।
(৩) খাদ্য শষ্য, বাজারমূল্য, বন্যা, দূর্যোগ ইত্যাদি বিষয়ে শুধু ডায়েরিতে অন্তর্ভূক্ত করলেই চলে, পিআরবি’র ৩৭৭(ই) প্রবিধান অনুসারে এর তদন্ত করতে হয় না।
৪। কেন এবং কখন জিডি করবেন?
যদি আপনার গুরুত্বপূর্ন কোনো জিনিস যেমন কোনো দলিল, পাসপোর্ট চেক বই, ডেবিট কার্ড/ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল বা অন্য কোনো কাগজপত্র যা হারিয়ে যাবার কারণে আপনার ক্ষতি হতে পারে এবং যা পুনঃউত্তোলন করা দরকার; কোনো ধরনের হুমকি পেলে; কোনো ব্যক্তি হারিয়ে গেলে (শিশু/বয়স্ক/গৃহকর্মী), নিখোঁজ কোনো ব্যক্তি অনেক চেষ্টার পরও যাকে পাওয়া যাচ্ছে না; অহেতুক কারো উপস্থিতি; কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বিপদাশঙ্কা; ইভটিজিং ইত্যাদি বিষয়ে আপনি থানায় জিডি করতে পারেন।
৫। জিডি যেভাবে করবেন
আপনি থানায় গিয়ে জিডি লিখতে পারেন অথবা আপনি আপনার বক্তব্য হাতে লিখে বা কম্পিউটার কম্পোজ করে নিয়ে থানায় যেতে পারেন। এজন্য আপনি একটি সাদা কাগজের বাম পাশে দুই ইঞ্চি মার্জিন রেখে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবরে আপনার বক্তব্য হাতে বা কম্পিউটারে কম্পোজ করে এবং এর আরো দু’টি ফটোকপি অর্থাৎ আপনার লিখিত বক্তব্যের মোট তিনটি কপি নিয়ে থানায় যাবেন। জিডিতে অবশ্যই আপনার সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।
৬। থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তার (ডিউটি অফিসার) কাছে গিয়ে আপনার আগমনের উদ্দেশ্য তাকে জানান এবং সঙ্গে নিয়ে আসা দরখাস্তের তিনটি অনুলিপিই তাকে দিন। তিনি আপনার লেখা দরখাস্তের বাম পাশে রাখা মার্জিনে থানায় রাখা ডায়েরিতে অন্তর্ভূক্ত বিষয়াবলীর ক্রমানুযায়ী একটি নম্বর লিখবেন এবং তাতে স্বাক্ষর ও সীল মোহরাঙ্কিত করে একটি কপি আপনাকে দিবেন। বাকী দু’টি কপির একটি থানায় থাকবে এবং আরেকটি তদন্ত কর্মকর্তাকে দেয়া হবে তদন্ত করার জন্য। এজন্য থানায় আপনাকে কোনো টাকা পয়সা খরচ করতে হবে না। ব্যাস হয়ে গেল আপনার জিডি। আপনাকে দেয়া জিডির নম্বরযুক্ত কাগজটি বাসায় এনে যত্ন করে কোনো একটি ফাইলে রাখুন। প্রয়োজনের সময় যাতে আপনি খুঁজে পান। এ অবস্থায় আপনার আর করনীয় কিছু নেই। এরপর যা করার তা পুলিশই করবে।
৭। এবার পুলিশ জিডিতে আপনার বর্ণিত বিষয়ে তদন্ত শুরু করবে। অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে পুলিশ তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যেমন যদি আপনি কারো হুমকির পেয়ে জিডি করে থাকেন সেক্ষেত্রে সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রসিকিউশন রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবে আদালতে। যার উপর ভিত্তি করে একটি নন এফআইআর মামলার কার্যক্রম শুরু হবে। আর যদি কোনো হারানো দ্রব্যের বা নিখোঁজ ব্যক্তির বিষয়ে জিডি করে থাকেন সেক্ষেত্রে তা বা তাকে খুঁজে পেলে পুলিশ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
৮। কখনো কখনো শোনা যায় যে, থানা জিডি নেয়নি। সেক্ষেত্রে আপনি আদালতের মাধ্যমেও জিডি করতে পারেন। এজন্য আপনি আপনার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এগুবেন।
৯। জিডি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এটি আপনাকে আইনি সুরক্ষা যেমন দিতে পারে তেমনি যথাসময়ে যথাযথ জিডি না করার কারণে আইনি প্রক্রিয়ায় আপনি অনেক পিছিয়ে যেতে পারেন। তাই জিডি করার ক্ষেত্রে কখনোই মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না। প্রকৃত সত্য তুলে ধরুন। কাউকে ফাঁসানোর অসৎ উদ্দেশ্যে জিডি করতে যাবেন না। এটি আপনার জন্য বুমেরাং হতে পারে। জিডিতে আপনার কোন বক্তব্য আসা উচিৎ এবং কোনটি আসা উচিৎ নয় সে ব্যাপারে আপনি দ্বিধান্বিত হলে আইনজীবীর সহায়তা নিন। এমনকি আপনি থানা পুলিশের সহায়তাও নিতে পারেন।
১০। জিডি সম্পর্কে ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্টের ৫নং আইনের ৪৪ ধারায়, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ও ১৫৫ ধারায় এবং পিআরবি’র ৩৭৭ প্রবিধানে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
১১। ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্টের ৫নং আইনের ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি থানার (পুলিশ স্টেশন) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অবশ্যই একটি ডায়েরি সংরক্ষণ করিবেন, যাতে সময়ে সময়ে সরকারের নির্দেশনা, অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগকারীদের নাম, গ্রেপ্তারকৃতদের নাম, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, তাদের নিকট থেকে উদ্ধারকৃ অস্ত্র/ সম্পত্তির বিবরণ এবং সাক্ষিদের নাম ও ঠিকানা থাকবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওই ডায়েরি পরিদর্শন করতে পারবেন।
১২। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ও ১৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট কেউ কোনো সংবাদ নিয়ে এলে তা আমলযোগ্য বা আমলঅযোগ্য যাই হউক না কেন তিনি ওইসব সংবাদ থানায় থাকা সরকার নির্ধারিত রেজিস্টিারে লিখে রাখবেন বা তার অধীনস্থ কাউকে লিখিতে নির্দেশ দিবেন। উক্ত লিখিত সংবাদটি সংবাদদাতাকে পড়ে শুনাতে হবে এবং সংবাদদাতা তার প্রদত্ত ও লিখিত সংবাদের নীচে স্বাক্ষর করবেন।
১৩। পিআরবি (Police Regulations, Bengal.) ৩৭৭ প্রবিধানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানায় রক্ষিত ৬৫নং বিপি ফরমে কার্বন পেপার যুক্ত করে দিন ও সময় উল্লেখপূর্বক তার গোচরে আনা প্রত্যেকটি ঘটনা বা সংবাদের বিবরণ তা আমলযোগ্য বা অআমলযোগ্য যাই হউক না কেন তা সঠিক ও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করবেন। ওই ডায়েরিতে সংবাদদাতা/
অভিযোগকারীদের নাম-ঠিকানা, গ্রেপ্তারকৃতদের নাম-ঠিকানা, তাদের নিকট থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র বা বস্তু সামগ্রী, সাক্ষিদের নাম-ঠিকানা অন্তর্ভূক্ত করিতে হইবে। শুধু তাই নয় কখন কাকে কোথা থেকে গ্রেপ্তার করা হলো, কখন তাকে থানা হাজতে নিয়ে আসা হলো, কখন তাকে আদালতে পাঠানো হলো, এজন্য কত খরচ হলো এসবও ওই ডায়েরিতে লিখিতে হইবে।
১৪। এছাড়াও ফসল, রাস্তা, নদী, ইত্যাদি সেতু, রেলওয়ের বেড়া, সরকারি ভবন, ফেরি, বাঁধ, গাছ, টেলিগ্রাফ লাইন, বৃহৎ দাবানল, প্লাবন, ঝড়, রেল বা অন্যান্য গুরুতর দুর্ঘটনার সংবাদ; কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব, ব্যাপকতা, কলেরা, বসন্ত, জ্বর বা অন্যান্য মহামারী রোগের তথ্য, ব্যাপক হারে গবাদি পশুর রোগ; গলিতে বা কোনো স্থানে বা স্টেশনে ব্যাপক জনসমাগম; বন্দীদের আগমনের, প্রস্থানের, কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটন, ব্যাপকভাবে কোনো লেনদেন এবং থানার কর্তব্যরতদের দায়িত্ব বণ্টন; কর্মকর্তা, থানার প্রহরী পরিবর্তনের মধ্যে দায়িত্ব বিতরণ; থানায় নতুন কোনো পুলিশ সদস্য বা অফিসারের আগমন বা বিদায়, কর্তব্যরতদের কারো কোনো ধরনের অসদাচরণ, প্যারেড, সজ্জা পরিদর্শন, ব্যারাক পরিদর্শন, ছুটি থেকে ফেরা, কর্মকর্তাদের নতুন আগমন; সৈন্যবাহিনীর প্যারেড তাদের দ্বারা সজ্জিত বা তথ্য সন্দেহজনক অক্ষর, বিদেশিদের বা উপজাতিদের বিচরণ, অস্বাভাবিক জনসংখ্যার উপস্থিতি ইত্যাদি তথ্যাবলীও অন্তর্ভূক্ত হইবে।

মুসলিম আইন ও হেবা বিধান।



হেবা বা gift.যেকোনো বিত্তবান ব্যক্তি ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের পর তার অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে তার উচিত অতিরিক্ত মূলধন কোনো অভাবী ব্যক্তির অভাব মোচনে ব্যয় করা। সমাজে সাম্য আনার চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'হেবা জীবনোপকরণের একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া। চাওয়া ও প্রতীক্ষা ছাড়া এক ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে কিছু লেনদেন করাকেই বলে হেবা।'

হিন্দু আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বিনা প্রতিদানে তার সম্পত্তিকে নিজস্ব স্বত্ব পরিত্যাগ করে অপর ব্যক্তির অনুকূলে অধিকার বা স্বত্ব সৃষ্টি করাকে দান বলে। অপর ব্যক্তি কর্তৃক দান গৃহীত হলেই ওই সম্পত্তিতে তার স্বত্ব সৃষ্টি সম্পূর্ণ হয়, অন্য প্রকারে নয় (মিতাক্ষরা ৩:৫-৬)। মুসলিম আইনের ১৩৮ ধারা অনুযায়ী হেবা হলো, কোনো বিনিময় বা প্রতিদান ছাড়াই কোনো সুনির্দিষ্ট সম্পত্তির স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দ্রুত হস্তান্তর (হেদায়া, ৪৮২, বেইলি ৫১৫)। হিন্দু ও মুসলিম আইন ছাড়াও ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২২ ধারায় দানের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এক ব্যক্তি কর্তৃক অপর ব্যক্তির কাছে স্বেচ্ছায় এবং বিনা প্রতিদানে কতিপয় বিদ্যমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তরকে দান বলে।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন আইনে প্রদত্ত সংজ্ঞার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, বিনা প্রতিদানে সম্পত্তি হস্তান্তর। যে ব্যক্তি হস্তান্তর করেন, তিনি দাতা আর যিনি গ্রহণ করেন তাকে গ্রহীতা বলা হয়।
আমাদের আলোচনার ক্ষেত্র হলো, মুসলিম আইন অনুসারে হেবার বিধানাবলি। কোনো মুসলিম হেবা করতে পারে? তার কী যোগ্যতা থাকা উচিত। এর সরল উত্তর হলো, নাবালক নয় এমন সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান হেবা বা দানের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন।

দানের উদ্দেশ্য :
 প্রত্যেক দানের ক্ষেত্রে দাতার মনোভাব সৎ হতে হবে। কাউকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে দান করা হলে উত্তমর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ইচ্ছা অনুযায়ী তা বাতিল ঘোষিত হতে পারে।
কী দান করা যায় : দৃশ্যমান সম্পত্তির সঙ্গে মোকদ্দমাযোগ্য দাবি ও অশরীরী সম্পত্তি সমভাবে হেবার বিষয়বস্তু হতে পারে। যেমন_
১. ঋণ, বিনিময়পত্র অথবা সরকারি প্রতিজ্ঞাপত্র।
২. মালিকানা অধিকার বা স্বত্ব, ভাড়া বা লিজের জমি এবং ক্রোককৃত সম্পত্তি।
৩. পীরের দরগায় প্রদত্ত শিরনির নির্দিষ্ট অংশ।
৪. বীমা পলিসির টাকাও দান করা চলে।

সর্বোপরি 'মাল' বলতে যা বোঝায় তার সবই অর্থাৎ আদায়যোগ্য দাবিসহ যেকোনো সম্পত্তি দান করা যায়।
কে হেবা গ্রহণ করতে পারে : একজন মুসলিম তার সমগ্র ভূ-সম্পত্তি যেকোনো ব্যক্তি হোক সে অমুসলিম বরাবর দান করতে পারেন। অর্থাৎ গৃহীতার ক্ষেত্রে সাবালক, নাবালক, পুত্র, অপুত্র, স্বামী কিংবা স্ত্রী, ধনী-নির্ধন বালাই নেই, যে কাউকে দান করা যায় এবং তিনি বা তারা নির্বিবাদে দান গ্রহণ করতে পারেন।

সীমারেখা : 
মুসলিম আইন মোতাবেক একজন মুসলমান জীবদ্দশায় তার সমগ্র সম্পত্তি দান করে দিতে পারে। এমনকি তার উওরাধিকারীদের বঞ্চিত করলেও এই দান অবৈধ হবে না। তবে শুধু মরজ-উল-মউতের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। মরজ-উল-মউত হলো মরণ অসুখ যাতে মৃত্যুর খুবই সম্ভাবনা থাকে এবং যার ফলে শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। মুসলিম আইনের ১৩৫ ধারা অনুযায়ী হেবা বা দানের বৈধতার জন্য দখল দানসহ যেসব শর্ত আছে, মরজ-উল-মউতের জন্যও একই শর্তাবলি প্রযোজ্য (বেঈলি, ৫৫১-৫৫২) ।
মরজ-উল-মউত হতে হলে নিম্নবর্ণিত উপাদান অবশ্যই থাকা দরকার ।
১. দাতার আশু মৃত্যুর আশঙ্কা গুরুতর হতে হবে।
২. দাতার মনে প্রকৃত মৃত্যুভয় জাগ্রত হতে হবে এবং
৩. ওই মৃত্যুভয়ের কিছু বাহ্যিক লক্ষণও, যেমন স্বাভাবিক কাজকর্মে বা পেশায় অক্ষমতা প্রকাশ হতে হবে।

উপরিউক্ত মতে, মরজ-উল-মউতে ঘটনা ও আইন উভয় প্রশ্নই জড়িত। অসুখটি দীর্ঘস্থায়ী হলে যেমন ক্ষয়রোগ বা 'অ্যালবুমিনুরিয়া'য় আসন্ন মৃত্যুর কোনো আশঙ্কা থাকে না বিধায় অসুখটি মরজ-উল-মউত নয়, তবে পরে যদি সেটি মৃত্যুকে সম্ভাবনাময় করে তুলে এবং এর ফলেই যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে অসুখটিকে মরজ-উল-মউত বলা যাবে। সংক্ষেপে দানটি আসন্ন মৃত্যুর আশঙ্কায় করা হলে, প্রিভি-কাউন্সিলের মতে এটি মরজ-উল-মউত বলে গণ্য হবে। তবে আবারও উল্লেখ্য যে বার্ধক্যজনিত হঠাৎ মৃত্যু মরজ-উল-মউত নয়।

মরজ-উল-মউত বা মরণ অসুখের সময় একজন মুসলমানের প্রদত্ত দানটি দাতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীরা সম্মতি প্রদান না করলে দাফন-কাফন ও অন্যান্য দেনা পরিশোধের পর মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের অধিক কার্যকর হবে না। প্রাসঙ্গিক বিধায় উল্লেখ্য যে দাতার ক্ষমতার এই সীমারেখাটি উইল বা ওসিয়তের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের সীমারেখার অনুরূপ।
বৈধ দানের আবশ্যকীয় শর্তাবলি : কোনো হেবা আইনানুগ হতে হলে অবশ্যই সেখানে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো_
(১) দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা বা প্রস্তাব (Offer).
(২) দানগ্রহীতা কর্তৃক উহা গ্রহণ (Acceptance).
(৩) আলোচ্য আইনের ১৫০ ধারা অনুযায়ী দাতা কর্তৃক দানগ্রহীতাকে দানের বিষয়বস্তুর দখল প্রদান (Possession hand over).
এই শর্তগুলো যদি পালন করা হয়, তাহলে হেবাটি আইনানুগভাবে সিদ্ধ হবে (বেঈলি, ৫১৫)।
রেজিস্ট্রেশন
মুসলিম আইন অনুযায়ী হেবা লিখিত এবং রেজিস্ট্রি করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি হেবার ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে মালিক বা সরকারি সেরেস্তায় নামজারির কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ নামজারি দখলের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নয়। তদুপরি lex loci actus বা law of the land হিসেবে ২০০৫ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা এবং একই সালের The Registration Act. 1908--এর ১৭ ধারা সংশোধনের ফলে অস্থাবর সম্পত্তির হেবা রেজিস্ট্রিকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

যেসব ক্ষেত্রে হেবা অবৈধ
১. অজাত ব্যক্তিকে হেবা : ভূমিষ্ঠ হয়নি(Unborn Child) এমন ব্যক্তিকে দান করা অবৈধ। উল্লেখ্য, Unborn Child বরাবর দান হিন্দু আইনে শর্ত সাপেক্ষে বৈধ।
২. ভবিষ্যতের হেবা : ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে এমন কোনো কিছুর হেবা বৈধ নয় অথবা ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট কিংবা অনির্দিষ্ট তারিখে সেটি কার্যকর হবে এই মর্মে প্রদত্ত দানও অবৈধ।
৩. দুই বা ততোধিক গ্রহীতাকে হেবা : বিভাগযোগ্য কোনো সম্পত্তি ভাগ না করে দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে দান করলে হেবাটি অবৈধ হবে, তবে প্রত্যেক দানগ্রহীতা আলাদাভাবে সম্পত্তির দখল পেলে বা পাওয়ার ব্যবস্থা করে নিলে, দানটিকে বৈধ করা যেতে পারে।
৪. দাতার বেদখলি সম্পত্তির হেবা : হেবাদাতা যতক্ষণ পর্যন্ত তার বেদখলি সম্পত্তি উদ্ধার করে দানগ্রহীতাকে তার দখল প্রদান না করবে বা দানটিকে সম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে দখল লাভ করে সেটি যাতে দানগ্রহীতার ক্ষমতার আওতাভুক্ত করার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা অবলম্বন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দাতার বেদখলি সম্পত্তির হেবা বৈধ হবে না।
৫. পাওনাদারদের প্রতারিত করার জন্য হেবা করা অবৈধ।
৬. দানগ্রহীতার উওরাধিকারী নিয়োগের ক্ষমতা : কোনো সম্পত্তির দানগ্রহীতাকে উওরাধিকারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা মুসলিম আইনে অবৈধ।
৭. অনিশ্চিত হেবা : দৈবক্রমে কোনো কিছু ঘটলে কার্যকর হবে এমন কোনো দান বৈধ নয়।

হেবা সাধারণত দুই প্রকার
ক. সাধারণ হেবা (Simple Hiba ) : যে হেবায় আদৌ কোনো প্রতিদান নেই এবং দাতা অবিলম্বে দানকৃত সম্পত্তি গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করেন ।
খ. হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ (Hiba-bil-awaz): এটি হলো কোনো রকমের মূল্য ব্যতিরেকে মালিকানা হস্তান্তর। কিন্তু হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ হলো মূল্যের বিনিময়ে হেবা। হেবা বা দানের রকমের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ ব্যতিক্রম। প্রকৃতপক্ষে 

এবং দৃষ্টত এটি বিক্রয় সমতুল্য (as good as sale). এতে ক্রয় চুক্তির যাবতীয় উপাদানই বিদ্যমান। যা হোক, এই দানটিকে বৈধ করতে হলে দুটি শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে, যথা_
ক. দানগ্রহীতা কর্তৃক বিনিময় মূল্য প্রকৃত বা বাস্তবিক পক্ষেই দিতে হবে।
খ. দাতার মালিকানা পরিত্যাগকরত দান করার আন্তরিক অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।
হেবা-বিল-অ্যাওয়াজের বিনিময়ের পর্যাপ্ততা (Adequacy of consideration) সম্পর্কে মুসলিম জুরিস্টদের মত হলো, বিনিময়ে প্রাপ্ত মূল্যের মান, প্রদত্ত বস্তুর সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কম হলেও অ্যাওয়াজটি বেআইনি হবে না। এমনকি একটি পবিত্র কোরআন কিংবা জায়নামাজ ও একটা 'তসবিহ' হেবা-বিল-অ্যাওয়াজের জন্য উত্তম বিনিময় (Consideration)। তবে এর মান যাই হোক না কেন, কার্যত এটি পরিশোধ করতে হবে, শুধু মুখে বললেই হবে না।
কখন হেবা বাতিল বা রদযোগ্য (Revocation of gift) :

কতিপয় বিশেষ অবস্থা ব্যতীত আর সব ক্ষেত্রেই হেবা বা দান রদযোগ্য। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ রদযোগ্য নয়। মুসলিম আইনের ১৬৭ ধারা অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত অবস্থায় দাতা হেবা বা দান বাতিল করতে পারেন।
১. দখল প্রদানের আগে যেকোনো সময় দাতা হেবা রদ করতে পারে। কারণ দখল প্রদানের আগে হেবাটি পূর্ণভাবে কার্যকর হয় না।
২. উপধারা (৪)-এর বিধানাবলি সাপেক্ষে, নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত, আর সব ক্ষেত্রেই দখল অর্পণের পরও দান রদ করা যেতে পারে_
ক. স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে যখন কোনো কিছু হেবা করা হয়।
খ. দাতার সঙ্গে দানগ্রহীতা যখন নিষিদ্ধ ধাপের মধ্যে সম্পর্কিত হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিয়া আইনের নিষিদ্ধ ধাপযুক্ত হোক আর না হোক, রক্ত সম্পর্কের যেকোনো আত্মীয়কে প্রদত্ত দানটি দখল অর্পণের পর বাতিলযোগ্য নয়।
গ. দানগ্রহীতা যখন মারা যাবে।
ঘ. যখন হেবার বস্তুটি বিক্রয় হেবা বা অন্যভাবে দানগ্রহীতার দখলবহির্ভূত হবে।
ঙ. হেবার বস্তুটি যখন হারিয়ে যাবে বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
চ. যেকোনো কারণেই হোক, যখন হেবাকৃত বস্তুর মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
ছ. যখন হেবার বস্তুটি এমনভাবে রূপান্তরিত হবে যে এর আসল আকৃতি শনাক্তযোগ্য থাকবে না, যেমন_যখন গম পিষানোর পর আটায় রূপান্তরিত হয়।
জ. যখন দাতা হেবার বিনিময়ে অ্যাওয়াজ গ্রহণ করবে।
৩. হেবাদাতাই শুধু হেবাটি বাতিল করতে পারেন। দাতার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা এটি বাতিল করতে পারবে না। অর্থাৎ দান রদে বা বাতিলে গ্রহীতার ইচ্ছা নহে, দাতার অভিপ্রায়ই মুখ্য এবং প্রযোজ্য।
৪. একবার দখল অর্পিত হলে, আদালতের ডিক্রি ব্যতীত অন্য কিছুতেই হেবাটি রদ হবে না। দাতা কর্তৃক দান রদের ঘোষণা বা দান রদের মামলা দায়ের করলেই দানটি রদ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত দাতা দান রদের ডিক্রি না পাবেন।
অমিত রসুল অপি
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
  

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

শেখ মুজিবর রহমান কতটা দিয়েছিলেন কি পেয়েছিলেন

১৯৭৩ সালে বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক আর্দে মার্লো ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বলেছিলেন, “তাঁকে আর শুধু একজন সাধারণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভাবা যায় না। তাকে দেখা যায় বাংলার প্রকৃতির আকাশ-বাতাস, পাহাড়, পর্বত, বৃক্ষরাজি শস্যক্ষেত্রের মাঝে”।

৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ (অলিখিত এবং স্বল্প সময়ের) বিশ্বের সেরা ভাষণ। এর আগে আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিস বার্গ এড্রেস বিশ্বের সেরা ভাষণ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ সালে দাশপ্রথা নিয়ে গৃহযুদ্ধে শহীদদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ।

ভার্জিনিয়ার গেটিসবার্গে দাসপ্রথার পক্ষে-বিপক্ষে যুদ্ধে প্রচুর সৈন্য মারা যায়, তাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তিন মিনিটের ভাষণ, যেখানে স্বাধীনতা ঘোষণার কথা ছিল না, ছিল গৃহযুদ্ধ এড়ানোর। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘গেটিসবার্গ এড্রেস’ খ্যাত ভাষণটি ছিল লিখিত এবং পরিসর ছিল সীমিত। যার সারমর্ম ছিল জনকল্যাণ করতে পারে জনগণের, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য সরকার ‘যা পৃথিবী থেকে ধ্বংস হবে না।’

অপরদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত (জনসভাস্থলের ওপর বোমারু বিমান) এলাকায় দাঁড়িয়ে, বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ভাষণটির বিষয়বস্তু অনেক বেশি সার্বজনীন। রণকৌশল, স্বাধীনতা আদায় ও রক্ষা এবং জনগণকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তাসহ কুপমন্ডুকতা থেকে মুক্ত করার দিকনির্দেশনা, সুদূরপ্রসারী অঙ্গীকার। কাব্যিক কৌশলে প্রকাশ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা এবং তার অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া......

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বাঙালীরা কোন দিনই স্বাধীন ছিল না। পাল বা সুলতানী আমল এমনকি যাকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বলা হয়, তার আমলেও নয়। আর নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাঙালি ছিলেন না। লর্ড ক্লাইভ বলেছিলেন পলাশী যুদ্ধের আশেপাশে যে সব কৃষক মাঠে চাষ করছিল, তারা যদি নবাবের পক্ষ হয়ে আক্রমণ করত লাঠিসোটা নিয়ে, তাহলেও ইংরেজরা জয়ী হতে পারত না। অর্থাৎ বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ ছিল না, নবাবের প্রতি।

কিন্তু বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেয়ার কৃতিত্ব সাধারণ বাঙালি কৃষকের সন্তান সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের।

তাই প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী সরদার ফজলুল করিম বলেছেন, "শেখ মুজিবকে আমরা ঈর্ষা করেছি আমাদের অতিক্রম করে বড় হওয়াতে। সবদিক থেকে বড়। তেজে, সাহসে, স্নেহে, ভালবাসায় এবং দুর্বলতায়। এবং সেই ঈর্ষা থেকেই আমরা তাঁকে হত্যা করেছি। কেবল এই কথাটি বুঝিনি যে ঈর্ষায় পীড়িত হয়ে ঈশিতের স্থান দখল করা যায় না" ...

ঈর্ষার ব্যাপারটা বঙ্গবন্ধু ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন, তাই তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন -

"পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষাতেই এই কথাটা পাওয়া যাবে না। ‘পরশ্রীকাতরতা’ পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয়, তাকে ‘পরশ্রীকাতর’ বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষাতেই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু  কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। নিজেকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না ততদিন এদের মুক্তি আসবে না’।

তাই তো এতোদিনেও কাঙ্ক্ষিত মুক্তি আসেনি। মুক্তি আসার আগেই পরশ্রীকাতর বাঙালি খুন করেছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে! 

যিশু-গান্ধী-মার্টিন লুথার কিং কে কেন হত্যা করা হলো? ওরা তো রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন না। আর ইসলামের চার খলিফার মধ্যে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছিল কী অপরাধে? মাত্র ৮ বছরের শিশু রাসেলকেও হত্যা করা হয়েছিল কোন অপরাধে?

যিশুখ্রিস্টকে হত্যার পাপের বোঝা ইহুদিরা আজো বয়ে বেড়াচ্ছে। শেখ মুজিব যিশু ছিলেন না, ছিলেন মানুষ। তাঁর পরিবারের শিশুরা, ছেলেরা, মেয়েরা সবাই মানুষ ছিল, ছিল আদম সন্তান। সম্ভবত এটি এ যুগের বৃহত্তম ও নৃশংসতম  হত্যাকাণ্ড। সন্দেহাতীতভাবে এমন হৃদয়হীন নির্মমতার নজির অন্যত্র মিলবে না......

কাস্মীর আর ইমরান খান দুটো কথা

চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সম্পর্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন- 


"ঘুষ খাবে, দুর্নীতি করবে, আর ওদিকে হালাল মাংস খুঁজবে। আমার ওপর অনেকে অখুশি হতে পারে। কিন্তু আমার কিছু আসে যায় না".....  


কাশ্নীর নিয়ে হাউকাউ করে কিন্তু চীনে উইঘুর সম্প্রদায়ের উপর চীন সরকারের নির্যাতন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন উইঘুরদের বিষয়টা তার জ্ঞাত নয়! 


ইমরান খান হচ্ছে মিথ্যাবাদী রাখাল। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা ইমরান খানের গদিই আর থাকবে না। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়ায় বেড়ে চলছে জেল বন্দি নওয়াজ শরীফের জনপ্রিয়তা। IMF এর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া দেশের তালিকায় এখন যুগ্নভাবে প্রথমস্থানে আর্জেন্টিনা ও পাকিস্তান। দু দেশই মোট ২১ বার করে ঋণ নিয়েছে IMF এর কাছ থেকে। 


অর্থনৈতিক মন্দাকে কাজে লাগিয়ে সংগঠিত হচ্ছে নওয়াজ সমর্থকরা। সে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে জমিয়তে উলেমায়ে ইসলাম। আগামী মাসে জমিয়তে উলেমায়ে ইসলাম পার্টির প্রধান ফজলুর রহমান ইসলামাবাদ অভিমুখে ইমরান বিরোধী সবচেয়ে বড় ‘লংমার্চ’ এর ডাক দিয়েছে এবং সেখানে অবস্থান ধর্মঘট করারও ঘোষণা দিয়েছে। তাতে যোগ দিচ্ছে নওয়াজ শরীফ সমর্থকরা। তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে সেনাবাহিনীর একটি অংশ। 


তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে! যে সেনাবাহিনী ইমরানকে ক্ষমতায় এনেছে তারাই এখন এখন কিক দেওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে! 


তিনি অদ্ভুত, তিনি কাশ্মীরের মুসলমানদের পক্ষে কথা বলেন কিন্তু কাশ্মীরী মেয়ে বিয়ে না করে প্রথম বিয়েটাই করেছেন একজন ইয়াহুদী নারীকে! বর্তমান দুই সন্তানও ইহুদী গর্ভজাত। 


তিনি জিহাদের ডাক দেন কিন্তু তার সাবেক স্ত্রী রেহেম খান বলেছে ইমরান খান সমকামী! সমকামীর জিহাদ! 


তিনি খান কী? তিনি ইমরান খান, মদ খান, শুরা খান! জিন্নাহর মত শুকোর খান! 


পাকিস্তান এক অদ্ভুত রাষ্ট্র। নাম ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান কিন্তু জাতির পিতা নাস্তিক জিন্নাহ! আর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে প্লেবয় ইমরান খান! 


ইমরান খানকি পারবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করার আগে নিজের গদি রক্ষা করতে কিংবা পাকিস্তানের বেশামাল অর্থনীতি সামাল দিতে!

আহারে জীবন জলে ভাসা পদ্ম যেমন ...


প্রকৃত ইসলাম ও ধর্মান্ধদের সন্ত্রাসী ইসলামের পার্থক্য

পাশ্চাত্য প্রকৃত ইসলামী জাগরণকে সন্ত্রাসী ইসলামের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চায় যাতে নিরাপদ থাকে বিশ্বব্যাপী তাদের লুণ্ঠন ও দখলদার ইসরাইলের ক...