সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

জি ডি কি জেনে নিন এক ঝলকে

জেনে নিন জিডি কি এবং তা কেন ,কখন সহজ উপায়ে করবেন ?

১। ইংরেজি ‘জেনারেল ডায়েরি (General Diary)’ শব্দ দু’টির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো জিডি (GD)। এটি আসলে থানায় রক্ষিত অপরাধ ও অন্যান্য সংবাদ বিষয়ক একটি রে
জিস্টার। সহজ সরল ভাষায় বলতে গেলে অপরাধ ও অন্যান্য সংবাদ বিষয়ক থানায় রক্ষিত ডায়েরিকে জিডি বলে। ২০০ পৃষ্ঠার একটি খাতা বা বইয়ে একটি থানার ২৪ ঘণ্টার যাবতীয় সবকিছু অন্তর্ভূক্ত থাকে। প্রতিদিন সকাল ৮টায় শুরু হয়ে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার সংবাদ রেকর্ড করে পরের দিন সকাল ৮টায় তা বন্ধ করা হয়।
২। জিডির গুরুত্ব:
জিডির আইনগত মূল্য অনেক। কেবলমাত্র একটি জিডির ভিত্তিতেই একটি মামলা শুরু হতে পারে। কোনো অপরাধের আশঙ্কা থেকে একটি জিডি করার পর ওই অপরাধটি সংঘটিত হলে আদালতে ওই জিডি সাক্ষ্য হিসেবেও গৃহীত হয়ে থাকে।
৩। জিডি সাধারণত তিন শ্রেণীর হয়ে থাকে। যেমন-
(১) ধর্তব্য অপরাধের (আমলযোগ্য) জিডি, যা থানায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সাথে সাথেই তদন্ত করতে হবে।
(২) অধর্তব্য অপরাধর (অআমলযোগ্য) জিডি, যা তদন্ত করার জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৫(২) ধারার বিধান মোতাবেক আদালতের অনুমতি নিতে হয়।
(৩) খাদ্য শষ্য, বাজারমূল্য, বন্যা, দূর্যোগ ইত্যাদি বিষয়ে শুধু ডায়েরিতে অন্তর্ভূক্ত করলেই চলে, পিআরবি’র ৩৭৭(ই) প্রবিধান অনুসারে এর তদন্ত করতে হয় না।
৪। কেন এবং কখন জিডি করবেন?
যদি আপনার গুরুত্বপূর্ন কোনো জিনিস যেমন কোনো দলিল, পাসপোর্ট চেক বই, ডেবিট কার্ড/ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল বা অন্য কোনো কাগজপত্র যা হারিয়ে যাবার কারণে আপনার ক্ষতি হতে পারে এবং যা পুনঃউত্তোলন করা দরকার; কোনো ধরনের হুমকি পেলে; কোনো ব্যক্তি হারিয়ে গেলে (শিশু/বয়স্ক/গৃহকর্মী), নিখোঁজ কোনো ব্যক্তি অনেক চেষ্টার পরও যাকে পাওয়া যাচ্ছে না; অহেতুক কারো উপস্থিতি; কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বিপদাশঙ্কা; ইভটিজিং ইত্যাদি বিষয়ে আপনি থানায় জিডি করতে পারেন।
৫। জিডি যেভাবে করবেন
আপনি থানায় গিয়ে জিডি লিখতে পারেন অথবা আপনি আপনার বক্তব্য হাতে লিখে বা কম্পিউটার কম্পোজ করে নিয়ে থানায় যেতে পারেন। এজন্য আপনি একটি সাদা কাগজের বাম পাশে দুই ইঞ্চি মার্জিন রেখে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবরে আপনার বক্তব্য হাতে বা কম্পিউটারে কম্পোজ করে এবং এর আরো দু’টি ফটোকপি অর্থাৎ আপনার লিখিত বক্তব্যের মোট তিনটি কপি নিয়ে থানায় যাবেন। জিডিতে অবশ্যই আপনার সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।
৬। থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তার (ডিউটি অফিসার) কাছে গিয়ে আপনার আগমনের উদ্দেশ্য তাকে জানান এবং সঙ্গে নিয়ে আসা দরখাস্তের তিনটি অনুলিপিই তাকে দিন। তিনি আপনার লেখা দরখাস্তের বাম পাশে রাখা মার্জিনে থানায় রাখা ডায়েরিতে অন্তর্ভূক্ত বিষয়াবলীর ক্রমানুযায়ী একটি নম্বর লিখবেন এবং তাতে স্বাক্ষর ও সীল মোহরাঙ্কিত করে একটি কপি আপনাকে দিবেন। বাকী দু’টি কপির একটি থানায় থাকবে এবং আরেকটি তদন্ত কর্মকর্তাকে দেয়া হবে তদন্ত করার জন্য। এজন্য থানায় আপনাকে কোনো টাকা পয়সা খরচ করতে হবে না। ব্যাস হয়ে গেল আপনার জিডি। আপনাকে দেয়া জিডির নম্বরযুক্ত কাগজটি বাসায় এনে যত্ন করে কোনো একটি ফাইলে রাখুন। প্রয়োজনের সময় যাতে আপনি খুঁজে পান। এ অবস্থায় আপনার আর করনীয় কিছু নেই। এরপর যা করার তা পুলিশই করবে।
৭। এবার পুলিশ জিডিতে আপনার বর্ণিত বিষয়ে তদন্ত শুরু করবে। অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে পুলিশ তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যেমন যদি আপনি কারো হুমকির পেয়ে জিডি করে থাকেন সেক্ষেত্রে সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রসিকিউশন রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবে আদালতে। যার উপর ভিত্তি করে একটি নন এফআইআর মামলার কার্যক্রম শুরু হবে। আর যদি কোনো হারানো দ্রব্যের বা নিখোঁজ ব্যক্তির বিষয়ে জিডি করে থাকেন সেক্ষেত্রে তা বা তাকে খুঁজে পেলে পুলিশ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
৮। কখনো কখনো শোনা যায় যে, থানা জিডি নেয়নি। সেক্ষেত্রে আপনি আদালতের মাধ্যমেও জিডি করতে পারেন। এজন্য আপনি আপনার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এগুবেন।
৯। জিডি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এটি আপনাকে আইনি সুরক্ষা যেমন দিতে পারে তেমনি যথাসময়ে যথাযথ জিডি না করার কারণে আইনি প্রক্রিয়ায় আপনি অনেক পিছিয়ে যেতে পারেন। তাই জিডি করার ক্ষেত্রে কখনোই মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না। প্রকৃত সত্য তুলে ধরুন। কাউকে ফাঁসানোর অসৎ উদ্দেশ্যে জিডি করতে যাবেন না। এটি আপনার জন্য বুমেরাং হতে পারে। জিডিতে আপনার কোন বক্তব্য আসা উচিৎ এবং কোনটি আসা উচিৎ নয় সে ব্যাপারে আপনি দ্বিধান্বিত হলে আইনজীবীর সহায়তা নিন। এমনকি আপনি থানা পুলিশের সহায়তাও নিতে পারেন।
১০। জিডি সম্পর্কে ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্টের ৫নং আইনের ৪৪ ধারায়, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ও ১৫৫ ধারায় এবং পিআরবি’র ৩৭৭ প্রবিধানে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
১১। ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্টের ৫নং আইনের ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি থানার (পুলিশ স্টেশন) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অবশ্যই একটি ডায়েরি সংরক্ষণ করিবেন, যাতে সময়ে সময়ে সরকারের নির্দেশনা, অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগকারীদের নাম, গ্রেপ্তারকৃতদের নাম, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, তাদের নিকট থেকে উদ্ধারকৃ অস্ত্র/ সম্পত্তির বিবরণ এবং সাক্ষিদের নাম ও ঠিকানা থাকবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওই ডায়েরি পরিদর্শন করতে পারবেন।
১২। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ও ১৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট কেউ কোনো সংবাদ নিয়ে এলে তা আমলযোগ্য বা আমলঅযোগ্য যাই হউক না কেন তিনি ওইসব সংবাদ থানায় থাকা সরকার নির্ধারিত রেজিস্টিারে লিখে রাখবেন বা তার অধীনস্থ কাউকে লিখিতে নির্দেশ দিবেন। উক্ত লিখিত সংবাদটি সংবাদদাতাকে পড়ে শুনাতে হবে এবং সংবাদদাতা তার প্রদত্ত ও লিখিত সংবাদের নীচে স্বাক্ষর করবেন।
১৩। পিআরবি (Police Regulations, Bengal.) ৩৭৭ প্রবিধানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানায় রক্ষিত ৬৫নং বিপি ফরমে কার্বন পেপার যুক্ত করে দিন ও সময় উল্লেখপূর্বক তার গোচরে আনা প্রত্যেকটি ঘটনা বা সংবাদের বিবরণ তা আমলযোগ্য বা অআমলযোগ্য যাই হউক না কেন তা সঠিক ও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করবেন। ওই ডায়েরিতে সংবাদদাতা/
অভিযোগকারীদের নাম-ঠিকানা, গ্রেপ্তারকৃতদের নাম-ঠিকানা, তাদের নিকট থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র বা বস্তু সামগ্রী, সাক্ষিদের নাম-ঠিকানা অন্তর্ভূক্ত করিতে হইবে। শুধু তাই নয় কখন কাকে কোথা থেকে গ্রেপ্তার করা হলো, কখন তাকে থানা হাজতে নিয়ে আসা হলো, কখন তাকে আদালতে পাঠানো হলো, এজন্য কত খরচ হলো এসবও ওই ডায়েরিতে লিখিতে হইবে।
১৪। এছাড়াও ফসল, রাস্তা, নদী, ইত্যাদি সেতু, রেলওয়ের বেড়া, সরকারি ভবন, ফেরি, বাঁধ, গাছ, টেলিগ্রাফ লাইন, বৃহৎ দাবানল, প্লাবন, ঝড়, রেল বা অন্যান্য গুরুতর দুর্ঘটনার সংবাদ; কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব, ব্যাপকতা, কলেরা, বসন্ত, জ্বর বা অন্যান্য মহামারী রোগের তথ্য, ব্যাপক হারে গবাদি পশুর রোগ; গলিতে বা কোনো স্থানে বা স্টেশনে ব্যাপক জনসমাগম; বন্দীদের আগমনের, প্রস্থানের, কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটন, ব্যাপকভাবে কোনো লেনদেন এবং থানার কর্তব্যরতদের দায়িত্ব বণ্টন; কর্মকর্তা, থানার প্রহরী পরিবর্তনের মধ্যে দায়িত্ব বিতরণ; থানায় নতুন কোনো পুলিশ সদস্য বা অফিসারের আগমন বা বিদায়, কর্তব্যরতদের কারো কোনো ধরনের অসদাচরণ, প্যারেড, সজ্জা পরিদর্শন, ব্যারাক পরিদর্শন, ছুটি থেকে ফেরা, কর্মকর্তাদের নতুন আগমন; সৈন্যবাহিনীর প্যারেড তাদের দ্বারা সজ্জিত বা তথ্য সন্দেহজনক অক্ষর, বিদেশিদের বা উপজাতিদের বিচরণ, অস্বাভাবিক জনসংখ্যার উপস্থিতি ইত্যাদি তথ্যাবলীও অন্তর্ভূক্ত হইবে।

মুসলিম আইন ও হেবা বিধান।



হেবা বা gift.যেকোনো বিত্তবান ব্যক্তি ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের পর তার অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে তার উচিত অতিরিক্ত মূলধন কোনো অভাবী ব্যক্তির অভাব মোচনে ব্যয় করা। সমাজে সাম্য আনার চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'হেবা জীবনোপকরণের একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া। চাওয়া ও প্রতীক্ষা ছাড়া এক ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে কিছু লেনদেন করাকেই বলে হেবা।'

হিন্দু আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বিনা প্রতিদানে তার সম্পত্তিকে নিজস্ব স্বত্ব পরিত্যাগ করে অপর ব্যক্তির অনুকূলে অধিকার বা স্বত্ব সৃষ্টি করাকে দান বলে। অপর ব্যক্তি কর্তৃক দান গৃহীত হলেই ওই সম্পত্তিতে তার স্বত্ব সৃষ্টি সম্পূর্ণ হয়, অন্য প্রকারে নয় (মিতাক্ষরা ৩:৫-৬)। মুসলিম আইনের ১৩৮ ধারা অনুযায়ী হেবা হলো, কোনো বিনিময় বা প্রতিদান ছাড়াই কোনো সুনির্দিষ্ট সম্পত্তির স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দ্রুত হস্তান্তর (হেদায়া, ৪৮২, বেইলি ৫১৫)। হিন্দু ও মুসলিম আইন ছাড়াও ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২২ ধারায় দানের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এক ব্যক্তি কর্তৃক অপর ব্যক্তির কাছে স্বেচ্ছায় এবং বিনা প্রতিদানে কতিপয় বিদ্যমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তরকে দান বলে।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন আইনে প্রদত্ত সংজ্ঞার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, বিনা প্রতিদানে সম্পত্তি হস্তান্তর। যে ব্যক্তি হস্তান্তর করেন, তিনি দাতা আর যিনি গ্রহণ করেন তাকে গ্রহীতা বলা হয়।
আমাদের আলোচনার ক্ষেত্র হলো, মুসলিম আইন অনুসারে হেবার বিধানাবলি। কোনো মুসলিম হেবা করতে পারে? তার কী যোগ্যতা থাকা উচিত। এর সরল উত্তর হলো, নাবালক নয় এমন সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান হেবা বা দানের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন।

দানের উদ্দেশ্য :
 প্রত্যেক দানের ক্ষেত্রে দাতার মনোভাব সৎ হতে হবে। কাউকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে দান করা হলে উত্তমর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ইচ্ছা অনুযায়ী তা বাতিল ঘোষিত হতে পারে।
কী দান করা যায় : দৃশ্যমান সম্পত্তির সঙ্গে মোকদ্দমাযোগ্য দাবি ও অশরীরী সম্পত্তি সমভাবে হেবার বিষয়বস্তু হতে পারে। যেমন_
১. ঋণ, বিনিময়পত্র অথবা সরকারি প্রতিজ্ঞাপত্র।
২. মালিকানা অধিকার বা স্বত্ব, ভাড়া বা লিজের জমি এবং ক্রোককৃত সম্পত্তি।
৩. পীরের দরগায় প্রদত্ত শিরনির নির্দিষ্ট অংশ।
৪. বীমা পলিসির টাকাও দান করা চলে।

সর্বোপরি 'মাল' বলতে যা বোঝায় তার সবই অর্থাৎ আদায়যোগ্য দাবিসহ যেকোনো সম্পত্তি দান করা যায়।
কে হেবা গ্রহণ করতে পারে : একজন মুসলিম তার সমগ্র ভূ-সম্পত্তি যেকোনো ব্যক্তি হোক সে অমুসলিম বরাবর দান করতে পারেন। অর্থাৎ গৃহীতার ক্ষেত্রে সাবালক, নাবালক, পুত্র, অপুত্র, স্বামী কিংবা স্ত্রী, ধনী-নির্ধন বালাই নেই, যে কাউকে দান করা যায় এবং তিনি বা তারা নির্বিবাদে দান গ্রহণ করতে পারেন।

সীমারেখা : 
মুসলিম আইন মোতাবেক একজন মুসলমান জীবদ্দশায় তার সমগ্র সম্পত্তি দান করে দিতে পারে। এমনকি তার উওরাধিকারীদের বঞ্চিত করলেও এই দান অবৈধ হবে না। তবে শুধু মরজ-উল-মউতের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। মরজ-উল-মউত হলো মরণ অসুখ যাতে মৃত্যুর খুবই সম্ভাবনা থাকে এবং যার ফলে শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। মুসলিম আইনের ১৩৫ ধারা অনুযায়ী হেবা বা দানের বৈধতার জন্য দখল দানসহ যেসব শর্ত আছে, মরজ-উল-মউতের জন্যও একই শর্তাবলি প্রযোজ্য (বেঈলি, ৫৫১-৫৫২) ।
মরজ-উল-মউত হতে হলে নিম্নবর্ণিত উপাদান অবশ্যই থাকা দরকার ।
১. দাতার আশু মৃত্যুর আশঙ্কা গুরুতর হতে হবে।
২. দাতার মনে প্রকৃত মৃত্যুভয় জাগ্রত হতে হবে এবং
৩. ওই মৃত্যুভয়ের কিছু বাহ্যিক লক্ষণও, যেমন স্বাভাবিক কাজকর্মে বা পেশায় অক্ষমতা প্রকাশ হতে হবে।

উপরিউক্ত মতে, মরজ-উল-মউতে ঘটনা ও আইন উভয় প্রশ্নই জড়িত। অসুখটি দীর্ঘস্থায়ী হলে যেমন ক্ষয়রোগ বা 'অ্যালবুমিনুরিয়া'য় আসন্ন মৃত্যুর কোনো আশঙ্কা থাকে না বিধায় অসুখটি মরজ-উল-মউত নয়, তবে পরে যদি সেটি মৃত্যুকে সম্ভাবনাময় করে তুলে এবং এর ফলেই যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে অসুখটিকে মরজ-উল-মউত বলা যাবে। সংক্ষেপে দানটি আসন্ন মৃত্যুর আশঙ্কায় করা হলে, প্রিভি-কাউন্সিলের মতে এটি মরজ-উল-মউত বলে গণ্য হবে। তবে আবারও উল্লেখ্য যে বার্ধক্যজনিত হঠাৎ মৃত্যু মরজ-উল-মউত নয়।

মরজ-উল-মউত বা মরণ অসুখের সময় একজন মুসলমানের প্রদত্ত দানটি দাতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীরা সম্মতি প্রদান না করলে দাফন-কাফন ও অন্যান্য দেনা পরিশোধের পর মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের অধিক কার্যকর হবে না। প্রাসঙ্গিক বিধায় উল্লেখ্য যে দাতার ক্ষমতার এই সীমারেখাটি উইল বা ওসিয়তের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের সীমারেখার অনুরূপ।
বৈধ দানের আবশ্যকীয় শর্তাবলি : কোনো হেবা আইনানুগ হতে হলে অবশ্যই সেখানে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো_
(১) দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা বা প্রস্তাব (Offer).
(২) দানগ্রহীতা কর্তৃক উহা গ্রহণ (Acceptance).
(৩) আলোচ্য আইনের ১৫০ ধারা অনুযায়ী দাতা কর্তৃক দানগ্রহীতাকে দানের বিষয়বস্তুর দখল প্রদান (Possession hand over).
এই শর্তগুলো যদি পালন করা হয়, তাহলে হেবাটি আইনানুগভাবে সিদ্ধ হবে (বেঈলি, ৫১৫)।
রেজিস্ট্রেশন
মুসলিম আইন অনুযায়ী হেবা লিখিত এবং রেজিস্ট্রি করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি হেবার ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে মালিক বা সরকারি সেরেস্তায় নামজারির কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ নামজারি দখলের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নয়। তদুপরি lex loci actus বা law of the land হিসেবে ২০০৫ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা এবং একই সালের The Registration Act. 1908--এর ১৭ ধারা সংশোধনের ফলে অস্থাবর সম্পত্তির হেবা রেজিস্ট্রিকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

যেসব ক্ষেত্রে হেবা অবৈধ
১. অজাত ব্যক্তিকে হেবা : ভূমিষ্ঠ হয়নি(Unborn Child) এমন ব্যক্তিকে দান করা অবৈধ। উল্লেখ্য, Unborn Child বরাবর দান হিন্দু আইনে শর্ত সাপেক্ষে বৈধ।
২. ভবিষ্যতের হেবা : ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে এমন কোনো কিছুর হেবা বৈধ নয় অথবা ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট কিংবা অনির্দিষ্ট তারিখে সেটি কার্যকর হবে এই মর্মে প্রদত্ত দানও অবৈধ।
৩. দুই বা ততোধিক গ্রহীতাকে হেবা : বিভাগযোগ্য কোনো সম্পত্তি ভাগ না করে দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে দান করলে হেবাটি অবৈধ হবে, তবে প্রত্যেক দানগ্রহীতা আলাদাভাবে সম্পত্তির দখল পেলে বা পাওয়ার ব্যবস্থা করে নিলে, দানটিকে বৈধ করা যেতে পারে।
৪. দাতার বেদখলি সম্পত্তির হেবা : হেবাদাতা যতক্ষণ পর্যন্ত তার বেদখলি সম্পত্তি উদ্ধার করে দানগ্রহীতাকে তার দখল প্রদান না করবে বা দানটিকে সম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে দখল লাভ করে সেটি যাতে দানগ্রহীতার ক্ষমতার আওতাভুক্ত করার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা অবলম্বন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দাতার বেদখলি সম্পত্তির হেবা বৈধ হবে না।
৫. পাওনাদারদের প্রতারিত করার জন্য হেবা করা অবৈধ।
৬. দানগ্রহীতার উওরাধিকারী নিয়োগের ক্ষমতা : কোনো সম্পত্তির দানগ্রহীতাকে উওরাধিকারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা মুসলিম আইনে অবৈধ।
৭. অনিশ্চিত হেবা : দৈবক্রমে কোনো কিছু ঘটলে কার্যকর হবে এমন কোনো দান বৈধ নয়।

হেবা সাধারণত দুই প্রকার
ক. সাধারণ হেবা (Simple Hiba ) : যে হেবায় আদৌ কোনো প্রতিদান নেই এবং দাতা অবিলম্বে দানকৃত সম্পত্তি গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করেন ।
খ. হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ (Hiba-bil-awaz): এটি হলো কোনো রকমের মূল্য ব্যতিরেকে মালিকানা হস্তান্তর। কিন্তু হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ হলো মূল্যের বিনিময়ে হেবা। হেবা বা দানের রকমের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ ব্যতিক্রম। প্রকৃতপক্ষে 

এবং দৃষ্টত এটি বিক্রয় সমতুল্য (as good as sale). এতে ক্রয় চুক্তির যাবতীয় উপাদানই বিদ্যমান। যা হোক, এই দানটিকে বৈধ করতে হলে দুটি শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে, যথা_
ক. দানগ্রহীতা কর্তৃক বিনিময় মূল্য প্রকৃত বা বাস্তবিক পক্ষেই দিতে হবে।
খ. দাতার মালিকানা পরিত্যাগকরত দান করার আন্তরিক অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।
হেবা-বিল-অ্যাওয়াজের বিনিময়ের পর্যাপ্ততা (Adequacy of consideration) সম্পর্কে মুসলিম জুরিস্টদের মত হলো, বিনিময়ে প্রাপ্ত মূল্যের মান, প্রদত্ত বস্তুর সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কম হলেও অ্যাওয়াজটি বেআইনি হবে না। এমনকি একটি পবিত্র কোরআন কিংবা জায়নামাজ ও একটা 'তসবিহ' হেবা-বিল-অ্যাওয়াজের জন্য উত্তম বিনিময় (Consideration)। তবে এর মান যাই হোক না কেন, কার্যত এটি পরিশোধ করতে হবে, শুধু মুখে বললেই হবে না।
কখন হেবা বাতিল বা রদযোগ্য (Revocation of gift) :

কতিপয় বিশেষ অবস্থা ব্যতীত আর সব ক্ষেত্রেই হেবা বা দান রদযোগ্য। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ রদযোগ্য নয়। মুসলিম আইনের ১৬৭ ধারা অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত অবস্থায় দাতা হেবা বা দান বাতিল করতে পারেন।
১. দখল প্রদানের আগে যেকোনো সময় দাতা হেবা রদ করতে পারে। কারণ দখল প্রদানের আগে হেবাটি পূর্ণভাবে কার্যকর হয় না।
২. উপধারা (৪)-এর বিধানাবলি সাপেক্ষে, নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত, আর সব ক্ষেত্রেই দখল অর্পণের পরও দান রদ করা যেতে পারে_
ক. স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে যখন কোনো কিছু হেবা করা হয়।
খ. দাতার সঙ্গে দানগ্রহীতা যখন নিষিদ্ধ ধাপের মধ্যে সম্পর্কিত হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিয়া আইনের নিষিদ্ধ ধাপযুক্ত হোক আর না হোক, রক্ত সম্পর্কের যেকোনো আত্মীয়কে প্রদত্ত দানটি দখল অর্পণের পর বাতিলযোগ্য নয়।
গ. দানগ্রহীতা যখন মারা যাবে।
ঘ. যখন হেবার বস্তুটি বিক্রয় হেবা বা অন্যভাবে দানগ্রহীতার দখলবহির্ভূত হবে।
ঙ. হেবার বস্তুটি যখন হারিয়ে যাবে বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
চ. যেকোনো কারণেই হোক, যখন হেবাকৃত বস্তুর মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
ছ. যখন হেবার বস্তুটি এমনভাবে রূপান্তরিত হবে যে এর আসল আকৃতি শনাক্তযোগ্য থাকবে না, যেমন_যখন গম পিষানোর পর আটায় রূপান্তরিত হয়।
জ. যখন দাতা হেবার বিনিময়ে অ্যাওয়াজ গ্রহণ করবে।
৩. হেবাদাতাই শুধু হেবাটি বাতিল করতে পারেন। দাতার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা এটি বাতিল করতে পারবে না। অর্থাৎ দান রদে বা বাতিলে গ্রহীতার ইচ্ছা নহে, দাতার অভিপ্রায়ই মুখ্য এবং প্রযোজ্য।
৪. একবার দখল অর্পিত হলে, আদালতের ডিক্রি ব্যতীত অন্য কিছুতেই হেবাটি রদ হবে না। দাতা কর্তৃক দান রদের ঘোষণা বা দান রদের মামলা দায়ের করলেই দানটি রদ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত দাতা দান রদের ডিক্রি না পাবেন।
অমিত রসুল অপি
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
  

প্রকৃত ইসলাম ও ধর্মান্ধদের সন্ত্রাসী ইসলামের পার্থক্য

পাশ্চাত্য প্রকৃত ইসলামী জাগরণকে সন্ত্রাসী ইসলামের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চায় যাতে নিরাপদ থাকে বিশ্বব্যাপী তাদের লুণ্ঠন ও দখলদার ইসরাইলের ক...